32 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৫

সুন্দরগঞ্জে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির পালনে সাবলম্বী খামারীরা

spot_img

আরো সংবাদ

spot_img
spot_img

মোঃ গোলজার রহমান, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
জামাল হোসেন (৫৭) এর বাড়ি গাইবান্ধার রামভদ্র গ্রামে। তিনি এক সময় দিনমজুরের কাজ করতেন। সে সময় তিনি দৈনিক যে মজুরি পেতেন, তা দিয়ে তার সংসার চলতো না। ধারদেনা করে ১৯৮৪ সালে ২০টি হাঁস কিনেন জামাল হোসেন। সেই ২০টি হাঁস দিয়ে যাত্রা শুরু তিনি। পর্যায়ক্রমে মাছচাষ, মুরগি ও গরুর খামার গড়ে তোলেন। পাশাপাশি হার্ডওয়ার ও পোল্ট্রি খাদ্যের ব্যবসাও করছেন। কিনেছেন প্রায় আট-নয় বিঘা জমি। বর্তমানে জামাল হোসেন ছয়জন ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। মেধা ও পরিশ্রমে জীবনের চাকা পাল্টে দিয়েছেন তিনি। মাত্র ৩৫ বছরের ব্যবধানে দিনমজুর থেকে তিনি এখন কোটিপতি।

জামাল হোসেন জানালেন, বর্তমানে তাঁর এক একর ৫২ শতক জমিতে রয়েছে পুকুর। সেই পুকুরে মাছ চাষ করছেন। পুকুরের ওপরে মুরগির সেড। সেডের পাশেই গরুর খামার। খামারে রয়েছে ১ হাজার ২০০ মুরগি। প্রতিদিন ডিম পাচ্ছেন গড়ে ১ হাজার ১০০টি। ডিম বিক্রি করে মাসিক প্রায় ৫০ হাজার টাকা, মাছ বিক্রি করে সাড়ে ১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। আয় হচ্ছে ব্যবসা থেকেও।

তিনি বলেন, কথায় বলে পরিশ্রমে ধন আনে। আমি তা প্রমাণ করেছি। ভবিষ্যতে একটি মডেল খামার গড়ে তুলবো। যা দেখে খামার করতে মানুষ উদ্দুদ্ধ হবে। জামাল হোসেনের মত খামার করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এখন স্বাবলম্বী। উপজেলায় গরুর খামার করে ও পোল্ট্রি শিল্পের বিপ্লব ঘটেছে। ঘরে ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরুর খামার গড়ে উঠেছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্র জানায়, পনেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। লোক সংখ্যা প্রায় সাত লাখ। এরমধ্যে বেশিরভাগ মানুষ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করেন। তবে উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ২১০টি গরুর খামার, ১৫০টি ছাগলের খামার, ৬০টি ভেড়ার খামার, ৩৮টি হাঁসের খামার ও ২৩৯টি মুরগির খামার রয়েছে। খামারকে কেন্দ্র করে উপজেলায় প্রায় ২৫টি ডিমের পাইকারি আড়ত, প্রায় ২৫০টি গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির খাদ্য বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে এ উপজেলায় হাঁস মুরগির খামারের সংখ্যা অনেক বেশি। এজন্য সুন্দরগঞ্জ উপজেলাকে পোল্ট্রি জোন হিসাবে ঘোষণা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দুরে রামভদ্র গ্রাম। গ্রামটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের অন্তর্গত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরে ঘরে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনের চিত্র। কেউ বসতভিটায় গড়ে তোলা খামারে গরুর পরিচর্যা করছেন, কেউ মুরগির খামারে ডিম সংগ্রহ করছেন। ছোট ছোট বাজারে ডিমের আড়াতে বেচাকেনা চলছে। বেচাকেনা চলছে পোল্ট্রি খাদ্য। কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁদের সাফল্যের গল্প।

রামভদ্র গ্রামের আবদুর রহিম (৪০)। তিনি এক সময় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। মাসিক ছয় থেকে সাত হাজার টাকা বেতন পেতেন। তা দিয়ে সংসার চলতো কোন মতে। ১৫ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেন। বাড়িতে এসে গরু পালন শুরু করেন। তার খামারে বর্তমানে আটটি গরু রয়েছে। দুধ বিক্রি করে মাসিক আয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। পাশাপাশি তিনি ইনকিউবিটরে হাঁস-মুরগির বাচচা ফুটান। এখান থেকেও তার আয় হয়।

আবদুর রহিম বলেন, চাকরিতে হিসাবের পয়সা। তা দিয়ে সংসার চলে না। পরিশ্রম ও বুদ্দি খাটিয়ে নিজে ব্যবসা করলে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, তার প্রমাণ আমি নিজে। আগে পোশাক কারখানায় বেতন নিতাম। এখন আমি দুই তিনজনকে বেতন দেই।

রামভদ্র রাজবাড়ি গ্রামের কলেজ ছাত্র আবু তাহের। বাবা জিনাত আলী বর্গাচাষী। জমি থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে পাঁচজনের সংসারই চলে না। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি ছাগল পালন করেন। তার খামারে বর্তমানে ৬৪টি ছাগল রয়েছে।

আবু তাহের বলেন, হাট থেকে ছোট ছাগল কিনি। তা লালন পালন করে বড় করে বিক্রি করি। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়। লেখাপড়ার ফাঁকে এ কাজ করে নিজের খরচ চালাচ্ছি। পাশাপাশি সংসারেও যোগান দিচ্ছি।

একই গ্রামের আশেক আলী (৩৫)। তিনিও পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ছয় হাজার টাকা বেতন পেতেন। চাকরি ছেড়ে সাত বছর ধরে হাঁস পালন করছেন। তাঁর খামারে ১৫০টি হাঁস রয়েছে। হাঁসের খামার দিয়ে দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। সংসারেও স্বচ্ছলতা এসেছে।

আশেক আলী বলেন, ছোট হাঁসের বাচ্চা কিনে পালন করি। বড় করে বিক্রি করি। ডিম বিক্রি করেও আয় হয়। সবমিলিয়ে বর্তমানে মাসিক ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তা পেলে এই খামার বড় করবেন। এদিকে উপজেলায় গরুর খামার ও পোল্ট্রি শিল্পের প্রসার ঘটায় পোল্ট্রি খাদ্য ও ডিমের পাইকারি ব্যবসা গড়ে উঠেছে। উপজেলা শহর, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের হাট-বাজারে এখন অসংখ্য পোল্ট্রি খাদ্যের দোকান গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে ডিমের ব্যবসা।

রামভদ্র গ্রামের ডিম ব্যবসায়ি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিভিন্ন পোল্ট্রি খামার থেকে প্রতিটি ডিম ৮ টাকা ৩০ পয়সায় কিনে ৮ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করছি। এই ব্যবসা করে খামারিদের পাশাপাশি অনেক লোক স্বাবলম্বী হয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, গরু ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন উপজেলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে। এই শিল্পের প্রসারে খামারিদের ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান বলেন, খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণ ও চিকিৎসা সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি খামার গড়ে তুলতে মানুষকে উদ্দুদ্ধ করা হচ্ছে।

spot_img
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

spot_img
spot_img

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
ক্যাপচা ব্যবহারকারীর স্কোর ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন!
error: Content is protected !!