মোঃ গোলজার রহমান, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
তারাপুর চরের ৬৫ বছর বয়সের রেজাউল মিয়া জানান, “ঠান্ডাত হ্যামরা মরি গৈইনো বাহে। কেডা হ্যামাক ঠান্ডার কাপড় দিবে। ভোট আইলে সবাই এটা দিবে, সেটা দিবে, কইয়া ভোট নিয়ে যায়, এখন হ্যামরা ঠান্ডাত মরি কারো দেখা পাওনা। আজ কইদিন থাকি আগুন জ্বলেয়া ছাওয়াল পোয়াল বাড়িওয়ালীকে নিয়ে কষ্ট করি রাত দিন পার করছি। হ্যামার মেম্বর, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি এহন কেউ আইসে না। ভোট নেবার সময় যে নেতারা আসছিল, তাকো আর দেখনা। হ্যামার ঘরে খুব কষ্ট হইছে।
চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশা, কন কনে ঠান্ডা ও শৈত প্রবাহের কারনে অসহায় ও ছিন্নমুল পরিবারগুলো কাবু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের ভাসমান পরিবারগুলো ঠান্ডায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সকল কার্যক্রম। ঘন কুয়াশা এবং ঠান্ডায় অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ীরা যথা নিয়মে কর্মস্থলে যেতে পারছে না। যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। ঠান্ডার কারনে নানাবিধ রোগব্যধির প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপ-কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ওষুধের দোকানগুলো রোগির ভিড় লক্ষা করা গেছে।
উপজেলা সমাজসেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় একটি পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫০ হাজার ছিন্নমুল পরিবার রয়েছে। নি¤œ আয়ের এই পরিবার গুলো শীতবস্ত্রের অভাবে অসহনীয় ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের পরিমাণ একেবারেই অপ্রতুল। চলতি মৌসুমে সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। চরের ছিন্নমুল পরিবার গুলো খড় কুঁটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণ করছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু ও প্রসূতি মা’রা নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
হরিপুর ডাঙ্গার চরের সোলেমান মিয়া জানান, গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় চরের মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে বয়বৃদ্ধা, শিশু ও গর্ভবতি মা’দের নিদারুন কষ্ট হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন প্রকার শীতবস্ত্র পাই নাই। ঠান্ডার কারনে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। অনেকে বাড়ির মধ্যে খড় কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছে।
তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। তাঁর ইউনিয়নে ছিন্নমুল মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ৮ হাজার। শীতার্ত মানুষের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের। এবার শীত যে ভাবে জেঁকে বসেছে, তাতে করে শীতবস্ত্রের চাহিদা মেটাতে না পারলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তিনি প্রশাসনের নিকট অতিদ্রæত চাহিদা মোতাবেক শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মন্ডল জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা দেখা দিয়েছে। সরকারি ভাবে কিছু শীতবস্ত্র পাওয়া গেলেও তা এখনো বিতরণ করা হয়নি। তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এই শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। কিন্তু আমরা যে পরিমাণ শীতবস্ত্র পেয়েছি তা শীতার্ত মানুষের তুলনায় শীতবস্ত্রের পরিমান অনেক কম।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সুর্বনা ইসলাম জানান, প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে হাপানি, এ্যাজমা, নিমোনিয়া, পেটের পীড়া, স্বর্দি কাশিসহ নানাবিধ রোগীর সংখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসের তুলনায় রোগীর সংখ্যা দ্বিগুন হারে বেড়ে গেছে। মুলত ঠান্ডর কারণে এসব রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু, ও প্রসূতি মা’রা বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।