রিপন মোল্লা ও আমিনুর রহমান মানিক :
ঢাকার দোহার উপজেলার সুনামধন্য বিদ্যাপিঠ জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক ও দোহার অর্গানিক এগ্রো এর প্রতিষ্ঠাতা মোঃ নজরুল ইসলাম খান স্যার। যিনি দীর্ঘদিন যাবত অতি দক্ষতার সাথে শিক্ষকতা করছেন তিনি। বিদ্যালয়ে তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে বেশ। সকল শিক্ষার্থীদের সাথে সু-সম্পর্কও রয়েছে এই শিক্ষকরে। যখন সারা বিশ্বে করোনা মহামারীতে দেশ থমকে গিয়েছে সে সময় সমগ্র বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় তার এক প্রিয় ছাত্র মোঃ রাজিব শরীফকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন কিভাবে এই অলস সময়ে ভাল কিছু করা যায়। সেই চিন্তা চেতনা থেকেই শুরু করেন দোহার অর্গানিক এগ্রো নামে একটি কৃষি প্রজেক্ট। আর এই প্রজেক্টে কিভাবে আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে বিশদ্ধ কৃষি ফসল উৎপাদন করা যায়। করোনার মহামারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সত্যে সফলতার সাথে তৈরি করে চলছেন বিষমুক্ত ও বিশুদ্ধ নানা প্রজাতির কৃষি ফসল। যার স্থানীয় ভাবে এর চাহিদা রয়েছেও বেশ। ইতিমধ্যে দোহারে বিষমুক্ত কৃষি ফসল উৎপাদনে দোহার অর্গানিক এগ্রো সাড়া ফেলেছে এলাকা জুড়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দোহার অর্গানিক এগ্রো প্রজেক্টের বিষমুক্ত কৃষি ফসল স্থানীয় ভাবে চাহিদা রয়েছে অনেক। উপজেলার স্থানীয় বাজারে এই প্রজেক্টের উৎপন্ন ফসল বিক্রি করে থাকেন। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি এলাকার অনেক লোকজনই সরাসরি প্রজেক্ট থেকেও উৎপাদনকৃত শাক-সবজি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সবজি কিনে নিয়ে যায়।
বর্তমানে বাংলাদেশ করোনার মহামারী থেকে কাটিয়ে উঠলেও এই শিক্ষক তার কৃষিকে আকড়ে ধরে রেখেছেন। তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিষমুক্ত ও বিশুদ্ধ ফসল উৎপাদনে। যতটা সম্ভব রাসায়নিক বা কৃটনাশক ব্যবহার বর্জন করছেন এই শিক্ষক। কৃটনাশক এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে জীবানুনাশক হিসেবে ব্যবহার করছেন তিনি। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি যতটুকু সময় পান সেই সময়টুকু তিনি এই অর্গানিক এগ্রো প্রজেক্টের কৃষি ফসল উৎপাদন করছেন এবং সেই ফসলের পরিচর্যা করেই তিনি তার সময় ব্যয় করেন।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম খান বলেন, দোহার অর্গানিক এগ্রো প্রজেক্টের আওতায় বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করে যাচ্ছেন এর মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাধাঁকপি, সীম, ঢেড়স, উস্তা, করল্লা, পেঁপে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি বা লুব্বা, আলু, গাজর, মুলা, শশা, লালশাক, পালন শাক, ধনীয়া পাতা এবং পাশাপাশি পরিক্ষা মূলকভাবে তরমুজও চাষ করেছেন তিনি। এছাড়াও বিদেশী ফসল হিসেবে স্কুয়াচ বা আরবী ভাষায় যাকে কুচা বলে, সাম্মাম বা রকমেলন, ড্রাঙ্গন ফল ও ফিলিপাইনের আখঁসহ বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলের চাষ করছেন। তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন জাফরান চাষেরও। ইতি মধ্যে তিনি জাফরানের বীজ সংগ্রহ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধকতা হিসেবে তিনি মনে করেন বাংলাদেশে ভাল জাতের উন্নত মানের বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই বীজের কারনে কৃষক ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বীজের কারণে কৃষক তার লক্ষে পেীছাতে পারছে না। যদি ভাল মানে উন্নত জাতের বীজ পাওয়া যেত তাহলে আধুনিক কৃষি সম্প্রসারনে তাদের পরিকল্পনাকে আরো এগিয়ে নেওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন। সেই জন্য সারা বিশ্বে প্রচলিত টিস্যু কার্লচার, অথ্যাৎ প্রত্যেকটি টিস্যু থেকে চারা উৎপাদন করা যায়। সেজন্য একটি টিস্যু কার্লচার ল্যাব তৈরি করেছেন এই শিক্ষক ও তার এক ছাত্রকে নিয়ে। আর এই ল্যাবে বিভিন্ন জাতের চারার জন্য গবেষনা করে বসানো হয়েছে বিভিন্ন জাতের বীজ। যেখানে বর্তমানে বসানো রয়েছে আলু, জিনাইন কলা, ক্যামিলি ফুল, মসলা হিসেবে রয়েছে জাফরান। তিনি আশা করেন এর মাধ্যমে তাদের সফলতা আসবে।