সুজন খান :
থৈ থৈ পানি, মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছন্দ আর লাখো দর্শনার্থীর হৈ হৈ রব, কাঁশি-বাঁশি আর ঝাঁঝরের সুর, ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ আর দর্শনার্থীর করতালিতে মুখরিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে শনিবার (৫ আগষ্ট) ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীর দেওতলা থেকে হাসনাবাদ পয়েন্টে গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় নৌকার দলনেতা ঝাঁঝ ও কাঁশি বাজিয়ে সতীর্থদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও উৎসাহ জোগান। বাংলা ও বাঙ্গালীর চিরায়ত সংস্কৃতির প্রাচীনতম এ উৎসব উপভোগ করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধসহ নির্বিশেষে সকলেই মেতে ওঠে আনন্দে-উল্লাসে।
ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হাসনাবাদ, মৌলভীডাঙ্গি, নয়ানগর, মোলাশীকান্দা, নতুন বান্দুরা ও পুরাতন বান্দুরা এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় নৌকা বাইচে ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯ টি ঘাসি ও খেলনা নৌকাসহ ছোট বড় অনেক নৌকা অংশগ্রহণ করেন।
শোল্লা থেকে আসা দর্শনার্থী কাউসার আহাম্মেদ বলেন, অনেক বছর পর এই নৌকা বাইচ দেখতে আসলাম। ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ দেখে অনেক ভাল লাগলো। তবে প্রতি বছরই যদি এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়াজন করা হত তাহলে অনেক ভাল হত। কারণ বর্তমান সময়ে এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে।
এ সময় নদীর দুই কুল জুড়ে নৌকা বাইচ দেখতে লাখ লাখ দর্শনার্থী উপস্থিত হয়। ঢাকাসহ আশেপাশের মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা তাদের পরিবার নিয়ে এ নৗেকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে উপস্থিত হন। এই বাইচকে ঘিরে নদীর দুই পাড়ে বিভিন্ন খাবার ও বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে মেলার আয়ৈাজনও হয় বেশ
নৌকা বাইচ আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি ও নৌকা মালিক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় ৩৫ বছর পর আবার দেওতলা টু হাসনাবাদ পয়েন্টে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়। এবারের মত সবাই যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে প্রতি বছরই এই পয়েন্টে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হবে।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ মোল্লা ও নৌকার মালিক বলেন, বাংলার ঐতিহ্য ও দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই আমরা এই নৌকা বাইচে অংশ গ্রহণ করে থাকি। বাইচে নানান ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি হয় বলে কমিটি ও নৌকা মালিকেরা অংশগ্রহণ করতে চায় না বাইচে। তবে আমাদের নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটি থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা ও হারানো নৌকা বাইচের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করি আমাদের ঐতিহ্য ফিরে আসবে।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, আমাদের এই বাইচ কমিটি দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় যেসব স্থানে আগে নৌকা বাইচ হতো কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে সেসব স্থানে নৌকা বাইচ বন্ধ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করব সেসব এলাকার আয়োজকদের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে উদ্বুদ্ধ করব। নবাবগঞ্জে নৌকা বাইচের ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের। আমাদের এলাকার বাইচের সুনাম রয়েছে দেশব্যাপী। সেই সুনাম ধরে রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
এ সময় নৌকা বাইচে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন। নৌকা বাইচ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসেডিয়াম সদস্য মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, গেস্ট অব অর্নার ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম শেখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিপদ হালদার, নয়নশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পলাশ চৌধুরী, বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হিল্লাল মিয়া, বান্দুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজন কুমার সম্ভু, সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ুব ও বান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য রতন ডি রোজারিওসহ আরও অনেকে। এ সময় নৌকা বাইচ শেষে বিজয়ীদের মাঝে ১টি মোটরসাইকেল ও ৮টি ফ্রীজ পুরষ্কার দেওয়া হয়।