সিনিয়র প্রতিবেদক :
ঢাকার দোহার উপজেলায় ঈদের আগের রাতে (চাঁদ রাতে) আতশবাজি গাঁয়ে ছুঁড়তে নিষেধ করাকে কেন্দ্র করে ঈদের দিন সকালে সাংবাদিক শামীম আরমানের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছেন আসামীরা বলে অভিযোগ সাংবাদিক শামীম আরমানের।
রোববার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন দোহার থানার ওসি মোস্তফা কামাল। তিনি জানান, মামলায় এজাহার নামীয় আটজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শামীম আরমান বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন “চ্যানেল টোয়েন্টিফোর” এর ঢাকা জেলা দক্ষিণ প্রতিনিধি ও দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার দোহার প্রতিনিধি। এছাড়াও তিনি প্রিয়বাংলা নিউজ২৪ এর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগের রাতে (চাঁদ রাতে) শামীম আরমান ব্যক্তিগত কাজে জয়পাড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে তার ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে দক্ষিণ জয়পাড়া এলাকার পশু হাসপাতালের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তপু নামের এক কিশোর তার শরীরে একটি আতশবাজি ছুঁড়ে মারে। এ সময় ওই কিশোরের কাছে শামীম আতশবাজি ছুঁড়ে মারার কারণ জানতে চাইলে তার বড় ভাই অপু এসে তার ভাইকে কেনো হুমকি দিচ্ছেন বলে বাকবিতন্ডা শুরু করেন। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি মিটিয়ে দিলে শামীম আরমান সেখান থেকে চলে যায়।
এর একঘন্টা পর শামীম তার ভাড়া বাসায় ফিরলে আগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপুসহ আরও কয়েকজন শামীমের বাড়ির সামনে হাতে ইটপাটকেলসহ অবস্থান নিয়ে শামীমের ক্ষতি করার জন্য প্রায় দেড়ঘন্টা আতশবাজি ফাটায়। যা এলাকাবাসীর বিরক্তের কারণ হয়। পরে তাদের মধ্যে একজন একটি ইট শামীমের ঘরে ছুঁড়ে মারলে ঘরে থাকা আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়।
পরে শামীম বাসা থেকে বের হয়ে ইট ছুঁড়তে নিষেধ করলে তাকে গালি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয় অপুসহ আরও কয়েকজন। এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিন বেলা আনুমানিক পোনে ১১টার দিকে শামীম আরমান বাসার বাহিরে বের হলে আসামিরা লাঠিসোটা নিয়ে শামীমের উপর অর্তকিত হামলা করে। শামীম দৌড়ে বাসার গেটের ভেতরে প্রবেশ করলেও আসামিরা গেটের ভেতরে প্রবেশ করে তাকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি মেরে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এলে আসামিরা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। আহত শামীম আরমান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
হামলায় আহত সাংবাদিক শামীম আরমান জানান, তারা আমার উপর হামলা করেও ক্ষান্ত হয়নি। এখন আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যাচার করে বলছে আমি নাকি ওই কিশোরকে আঘাত করেছি। আমি ওই কিশোরকে কোনো রকমের আঘাত করিনি। শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলাম গায়ে আতশবাজি ছুঁড়লে কেন? তাকে আতশবাজি ছুড়তে নিষেধ করেছিলাম। এখন আসামিরাসহ একটি চক্র আমার মানহানি করতে ও সমাজে হেয় করতে ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য চক্রান্ত করছে এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এমনকি আসামিরা চক্রান্ত করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সাদা কাগজে তারা আমার বিরুদ্ধে এলাকায় গণসাক্ষর নিচ্ছে। কেউ কেউ না বুঝেই স্বাক্ষর দিচ্ছে। আর যারা বুঝতে পারছে তারা স্বাক্ষর দিচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমার উপর হামলার সময় হামলাকারীদের আমার ছয় বছরের শিশু মেয়ে কান্নাকাটি করে বলেছিলো আমার বাবাকে মেরোনা। তাতেও তাদের মন গলেনি। আমার স্ত্রীর অনুরোধও তারা শুনেননি। আমার উপর হামলা চালিয়েছে। এমনকি আজ সকালেও আসামিরা আমার সেজো ভাইয়ের বাসায় গিয়ে ভাবিকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, আপনার দেবরকে বলবেন মামলা তুলে নিতে না হয় এই এলাকা ছাড়া করবো। এছাড়াও ওর কি অবস্থা করি দেখতে পারবেন। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আসামিদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় শামীম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। তদন্ত চলছে। সাংবাদিকের উপর যারাই হামলা করেছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে দোহার সার্কেলের এএসপি মো. আশরাফুল আলম বলেন, পুলিশ ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।