সিনিয়র প্রতিবেদকঃ
অপরূপ নদী ইছামতি। সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের কাছে ভরা বর্ষায় ইছামতির প্রকৃত রূপ ধরা পড়ে। বর্ষায় উপচেপড়া পানিতে নদীর দু‘কূলে যখন ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হয় তখন মানুষের মন এই ঢেউখেলা দেখে বিমোহিত হয়। মহাকবি কায়বোবাদের স্মৃতিধন্য এ নদীতে প্রত্যেক বছর নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়। ১০০ বছর ধরে এ নদীতে নৌকাবাইচ উৎসব হয়ে আসলেও এবার নৌকাবাইচে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে জমে থাকা কচুরিপানা।
প্রতি বছর বাংলা সালের ভাদ্র মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখ নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর এলাকা বান্দুরা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৫টি পয়েন্টে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এই নৌকাবাইচ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে সব বয়সের মানুষ ভিড় জমান। ভাদ্রের ১ তারিখে ইছামতির তুইতাইল-শৈল্লা ও খানেপুর, ২ তারিখে বারুয়াখালী, ৩ তারিখে কলাকোপা, ৪ তারিখে বাধাকান্তপুর ও ৫ তারিখে দেওতলা এলাকায় নৌকাবাইচ হয়ে থাকে। এ নদীর প্রধান উৎস হচ্ছে পদ্মা। কাশিয়াখালী এলাকার পদ্মা নদীর সংযোগস্থলে বাঁধ দেয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমেও পানির স্বল্পতায় কচুরিপানায় ভরে গেছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানির অভাবে পাল্টে গেছে নদীর আসল চেহারা। এতে স্থানীয় পাঁচ হাজার জেলে পরিবার মৎস্য আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেইসাথে বেকার হয়ে পড়েছে নদী-সম্পৃক্ত অন্যান্য পেশার মানুষ।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাঁশিয়াখালী বেড়িবাঁধ রক্ষা মঞ্চ, সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম, নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি, ইছামতি বাঁচাও আন্দোলন বাঁধ খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসলেও এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন।
এদিকে নৌকাবাইচের মাত্র ১ সপ্তাহ বাকি থাকলেও কোনো আয়োজন চোখে পড়ছে না। নৌকার মালিকদের চিঠি দেয়া, অতিথিদের দাওয়াতপত্র প্রদান, বিজয়ীদের জন্য প্রাইজের ব্যবস্থার কোনো তোড়জোড় নেই।
তুইতাইল-খানেপুর নৌকাবাইচের আয়োজকরা জানান, ভাদ্র মাসের ১ তারিখে এখানে নৌকাবাইচের আয়োজন হয়। এ বছর এখানে কচুরিপানায় ঠাসা। কচুরিপানার জন্য কোনো নৌযান চলাচল করতে পারছে না।
প্রতিযোগী নৌকার মালিক মাসুদ মোল্লা জানান, ইছামতি নদীর কাঁশিয়াখালী যে স্থান দিয়ে সরাসরি পদ্মার পানি প্রবেশ করত সেখানে বাঁধ দেয়ায় পানি প্রবেশ করতে পারছে না। এতে নদীতে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়া এবং জমা হওয়া কচুরিপানা অন্যত্র সরতে পারছে না।
নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা জানান, কাঁশিয়াখালী বেড়িবাঁধ থেকে বান্দুরা পর্যন্ত ভাদ্র মাসে ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত ৫টি পয়েন্টে নৌবাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মতিউর রহমান বলেন, ইছামতি নদী খনন ও স্লুইস গেট নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ঢাকা-১ আসনের এমপি সালমান এফ রহমানের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।