26 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ৮, ২০২৫

দোহার ও নবাবগঞ্জ (ঢাকা-১) : সালমান রহমান ও সালমা ইসলামের হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই

spot_img

আরো সংবাদ

spot_img
spot_img

সুজন খান :
ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-১ আসন। এই আসনটিতে এবার নির্বাচন করছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সালমান এফ রহমান এবং লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।

ঢাকা-১ এই আসনটিতে ৭ জন প্রার্থী হলেও মূলত হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও জাতী পার্টির মনোনীত দুই প্রার্থীর সাথে। কারণ দুইজনই অনেক হেভিওয়েট সম্পন্ন প্রার্থী। দুইজনেরই অনেক মূল্যায়ন রয়েছে এই আসনটিতে। আর দুইজনই ইতিপূর্বে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এই আসনে। আর সালমান এফ রহমান তো বর্তমান রানিং এমপি। তাই ঢাকা জেলার অন্যান্য আসনের মধ্যে এই আসনের দিকে তাকিয়ে আছে অনেকে। তবে জাতীয় পার্টি চেষ্টা করবেন এই আসনটি পুনরোদ্ধারের জন্য। আর আওয়ামী লীগ লড়াই করবেন তাদের বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে।

এর আগে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দোহার ও নবাবগঞ্জ ঢাকা-১ আসন থেকে সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন। এ সময় এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। কিন্তু ভোটের দিন দুপুরে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ওই দিনই এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। ফলে সালমান এফ রহমান একক ভাবে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।

তবে পূর্বের সব জল্পনা-কল্পনা শেষে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যয় নিয়ে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালমান এফ রহমান ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর ভোটের মাঠে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়াও অন্যান্য প্রার্থীরাও প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই জয়লাভের আশায় ছুটছেন ভোটারদের দোরগড়ায়।

রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) দলীয় প্রতীক বরাদ্দের পরপরই দোহার ও নবাবগঞ্জের প্রধান প্রধান সড়কে আনন্দ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী সমর্থনকারীরা। তবে প্রতীক পাওয়ার পর সকল প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচার জোরদার করার পাশাপাশি নিজ নিজ কৌশল প্রয়োগ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন যদি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে এই আসনে নৌকা ও লাঙ্গল মার্কার মধ্যেই ভোটের মাঠে লড়াই হবে হাড্ডা-হাড্ডি। তবে শেষ পর্যন্ত ফলাফল কি হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষারত দোহার ও নবাবগঞ্জের এলাকবাসীসহ ঢাকা জেলার অন্যান্য সকল আসনের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দোহার ও নবাবগঞ্জ (ঢাকা-১) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত একক প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও জাতীয় পার্টির মনোনীত একক প্রার্থী সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামসহ ৯ জনেরই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষনা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ।

ঢাকা-১ (দোহার ও নবাবগঞ্জ) উপজেলার এই আসনে অন্যতম দুই হেভিওয়েট প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের সালমান এফ রহমান নৌকা প্রতীক এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।

অন্য প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কমরেড মোঃ করম আলী, মুক্তিজোটের আব্দুর রহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুল হাকিম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সামসুজ্জামান চৌধুরী, গণফ্রন্টের শেখ মোঃ আলী, তৃণমূল বিএনপির মুফিদ খান ও জাকের পার্টির লুৎফর রহমান খান। তবে প্রতীক বরাদ্দের দিন জাকের পার্টির লুৎফর রহমান খান ও মুক্তিজোটের আব্দুর রহিম তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।

এই আসনে দুই হেভিওয়েট সম্পন্ন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্ধারিত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন জনসংযুগ, উঠান বৈঠক আর সমাবেশ। কে কার থেকে বেশি কৌশল প্রয়োগ করে নিজের অবস্থান জোরদার করবেন এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। আর এ কৌশল প্রয়োগ করেই ভোট ব্যাংকের বাইরে থাকা ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা চলছে।

ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের সমর্থন এবং প্রশাসনিক লোকজনের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নানামুখী সমীকরণ আলোচনায় আসছে। প্রার্থীদের মধ্যে কার পাল্লা ভারি তাও নিয়েও আলোচনা হচ্ছে স্থানীয় বাজার গুলোর চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায়। নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোহার ও নবাবগঞ্জের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত পর্যন্ত গণসংযোগ করার পাশাপাশি পল্টাপাল্টি বক্তব্যও রাখছেন বিভিন্ন সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে শোডাউন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামলেও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যের চেয়ে অপ্রকাশ্যে বেশি কাজ করছেন। তবে এটি দলটির একটি কৌশল বলে জানা যায়।

এলাকাবাসী জানান, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এই দুই দলের মধ্যেই মূলত লড়াই হবে ভোটের মাঠে। তবে সুমীকরণে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে বর্তমানে। আর এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা-১ এই আসনে ক্ষমতায় রয়েছেন। তাই এই দোহার ও নবাবগঞ্জ দুই উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ, রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রসায় ব্যাপক ভাবে উন্নয়ন হয়েছে। এরই জন্য এবারও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সালমান এফ রহমানকে নৌকা মার্কায় ভোট দিবে জনগণ।

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত শিল্প ও উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা জননেতা সালমান এফ রহমান এমপি হওয়ার পর থেকেই এই আসনটিতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দোহার ও নবাবগঞ্জ ঢাকা-১ এই আসনে। তিনি বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পের অনুমোদন, পদ্মায় বাধ নির্মাণ, রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল কলেজ, মাদ্রাসার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এই আসনের দুইটি উপজেলায় আমরা বিগত দিনে সফল ভাবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পুর্ণাজ্ঞ কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছি। এই আসনে জনগণের আস্থাভাজন ও ভালোবাসার অপর নাম সালমান এফ রহমান। আগামী নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। কারণ তিনি জনগণের জন্য কাজ করেছেন, তিনি উন্নয়নের কাজ করেছেন। সুতরাং তিনি আবার দ্বিতৃীয় বারের মত এই আসন থেকে ব্যাপক পরিমান মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আবারও নির্বাচিত হবেন ইনশাআল্লাহ।

এ বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছর যাবত ক্ষমতায় ছিলো বলেই দেশে অনেক বড় বড় অবকাঠামোর উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এখন সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আছে। যা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। এ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের উন্নয়নে কাজ করে। আমি বিগত দিনে আমার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপকভাবে উন্নয়নে কাজ করেছি। তাই জনগণ আমাকে ভালবেসে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে আমাকে নির্বাচিত করবেন।

সালমান এফ রহমান আরও বলেন, দোহার- নবাবগঞ্জের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো নদী ভাঙন। যা প্রতিরোধে ইতিমধ্যেই আমি কাজ শুরু করতে পেরেছি। এটা শেষ হলে এ এলাকার মানুষদের নদী ভাঙ্গণের স্থায়ীভাবে সমাধান হবে। এছাড়াও সবার দাবি ছিলো এলাকায় গ্যাস সংযোগ, সেটাও শুরু হয়ে গেছে এবং অতি দ্রæতই শেষ হবে। এছাড়াও কিছু রাস্তাঘাটের কাজসহ যা যা বাকি আছে তা আমি পুনরায় নির্বাচিত হলে সব অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করবো ইনশাআল্লাহ।

অপরদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামও খুব সহজে ভোটের মাঠে ছাড় দেবেন না। কারণ তিনিও এর আগে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। সে সময় তিনিও দোহার ও নবাবগঞ্জ এই দুই উপজেলায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তাই তারও জানা রয়েছে সকল সমীকরণ। পাশাপাশি তিনি অনেক গরীব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক ভাবে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাই তিনিও লড়ে যাবেন ভোটের মাঠে তার হারিয়ে যাওয়া এই আসনটি পূনরোদ্ধারের জন্য।

নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ জুয়েল আহমেদ বলেন, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা-১ এই আসনে একশত ভাগ প্রস্তুত জাতীয় পার্টি। ইতোমধ্যেই দোহার ও নবাবগঞ্জ এই দুইটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আমরা সফল ভাবে আমাদের কমিটি গঠন করে দলকে শক্তিশালী করেছি।
তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে আমাদের নেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময় তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অনেক সহযোগিতা করেছেন। দোহার ও নবাবগঞ্জ এই দুই উপজেলায় আমাদের নেত্রী সালমা ইসলাম অনেক উন্নয়ন করছেন। জনগণ আমাদের নেত্রীকে ভালোবাসেন। তাই জনগণ তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করি। যদি সুষ্ঠ ও নিরোপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আমাদের জয় সুনিশ্চিত।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, অতীতেও আমি আমার এই দুই উপজেলার উন্নয়নে কাজ করেছি। যদি সুষ্ঠ ও নিরোপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আমি নির্বাচিত হবো ইনশাআল্লাহ। আর আমি এই নির্বাচনে জয়ী হলে আমার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ শেষ করবো। বিশেষ ভাবে পদ্মার ভাঙনরোধ, স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ, গ্যাস সংযোগ প্রদানসহ দোহার-নবাবগঞ্জের সংকট সমাধানের কাজ করে যাবো।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণা চলবে আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ৭ জানুয়ারী সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ।

spot_img
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

spot_img
spot_img

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
ক্যাপচা ব্যবহারকারীর স্কোর ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন!
error: Content is protected !!