কাজী সোহেল:
বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বড় বড় সুসজ্জিত ঘাসী নৌকা আর মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর টিকারার টুডুপ টুডুপ ছন্দ মাতিয়ে তোলে ইছামতি নদীর দুই কুল। নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নারী পুরুষের হৈ হুল্লোরে আনন্দে মাতুয়ারা হয়ে উপভোগ করেন এমন দৃশ্য। এ সময় দর্শনার্থীরা উপভোগ করে বাংলার চিরায়ত রুপ। রোববার (২০ আগষ্ট) বিকালে ঢাকার নবাবগঞ্জ নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি, নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ, কলাকোপা ও যন্ত্রাইল ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় নৌকা বাইচের এমন দৃশ্যপট।
দীর্ঘ ২০ বছর পর ইছামতি নদীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ এলাকাবাসী উপভোগ করলেন। এতো বছর পর এ আয়োজনে তাই দর্শনার্থীদের আগ্রহও ছিল অনেক বেশি। দুপুরের কাঠ ফাটা রোদ্দুর উপেক্ষা করে ইছামতি নদীর তেলি বাড়ির ঘাট থেকে হরিষকুল ব্রীজ পর্যন্ত নদীর দু’পারের রাস্তায় ভীড় জমে যায়। দু’পার জুড়ে বসে বিশাল গ্রাম্য মেলা। বিকাল হতে ভীড় যেন আরও বেড়ে যায়। নাগর দোলা, বাঁশির শব্দে চারিদিক মুখর হয়ে উঠে। চলে সন্ধ্যায় পর্যন্ত। এ যেন উৎসবের আমেজ।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতায় নবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের নৌকা গুলো অংশ নেয়। খান বাড়ি, শেখ বাড়ি, লিটন ১, লিটন ২, সোনার তৈরী, দাদা-নাতী, শিকদার বাড়ী, শেখ আব্দুল খালেক, খাজা বাবা, মোহন মন্ডল নৌকাগুলো জোড়ায় জোড়ায় প্রতিযোগীতায় অংশ করে। মাঝি-মাল্লারা নদীর দুই কিলোমিটার এলাকা দাঁপিয়ে বেড়ায়।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, আমাদের এই বাইচ কমিটি দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় যেসব স্থানে আগে নৌকা বাইচ হতো। কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে বন্ধ আছে। সেসব এলাকার আয়োজকদের বাইচ আয়োজন করতে উদ্বুদ্ধ করি। তিনি বলেন, বাইচ আয়োজন এখন অনেক ব্যয় বহুল। সরকারের পক্ষ থেকে ফুটবল, ক্রিকেট খেলার আয়োজন করলেও নৌকা বাইচ আয়োজন করা হয় না। এমনকি কোনো সহযোগিতাও করে না। তবে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এখনো নৌকা বাইচ আয়োজন করা হচ্ছে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করছি প্রতিটি জেলা উপজেলায় একটি করে নৌকা বাইচ আয়োজনের।
আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহিম খলিল জানান, নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির দাবির প্রেক্ষিতে গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় দীর্ঘ ২০ বছর পর ইছামতীর কলাকোপা পয়েন্টে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হলো। আগামীতেও এমন নৌকা বাইচের আয়োজন করব।
পরে কলাকোপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রারাহিম খলিলের সভাপতিত্বে ও কলাকোপা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলামের সঞ্চলনায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এতে শেখ আব্দুল খালেক প্রথম পুরস্কার হিসেবে একটি মটর সাইকেল, দ্বিতীয় সিকদার বাড়ী ও তৃতীয় পুরস্কার শেখ বাড়ি একটি করে ফ্রিজসহ অংশগ্রহনকারী প্রতিটি নৌকার জন্য একটি করে এলইডি টেলিভিশন পুরস্কার দেয়া হয়।