27 C
Dhaka
সোমবার, জুলাই ৭, ২০২৫

অশ্রুসিক্ত জলে বিদায় বললেন তামিম

spot_img

আরো সংবাদ

spot_img
spot_img

রুপালী বাংলা নিউজ ডেস্ক :
নিজ শহর চট্টগ্রামে চাচা আকবর খানের হাত ধরে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে শৈশব থেকে ক্রিকেট খেলে শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দীর্ঘ ১৬ বছর নিয়মিত খেলেছেন তামিম ইকবাল। কিন্তু গত ৩ বছর ইনজুরি ও ফিটনেস সমস্যার কারণে নিয়মিত খেলতে পারেননি। যখন খেলেছেন ভালো করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে নানা সমালোচনার শিকার হতে হয় তাকে। এবার চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও তিনি পুরো ফিট হয়ে ওঠেননি। তবে প্রথম ম্যাচের আগে জানান শতভাগ ফিট না হলেও খেলবেন এবং খেলেনও। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং বিভিন্ন মহলে।

প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে মতানৈক্য হয়েছে তার এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তা নিয়ে বিরক্তিও প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার হঠাৎ ডাকা সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন তামিম। বারবার বাষ্পরূদ্ধ কণ্ঠে আর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় জানান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে বুধবারের ম্যাচটিই তার বাংলাদেশের হয়ে খেলা শেষ ম্যাচ।

তামিম অবসরে যেতে পারেন এমন গুঞ্জন বুধবার আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হারের পর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে। তামিম সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেন এবং সেজন্য টিম হোটেল ছেড়ে নিজের বাসায় চলে যান। নিজ শহরেই জাতীয় দল থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেবেন সেটি কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি। তবে তামিম গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়ে দেন বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করতে চান তিনি। এরপরই আলোচনা তৈরি হয়- তামিম কি অবসরে যাবেন নাকি শুধু নেতৃত্ব ছাড়বেন? বিসিবি কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। কারো ফোন ধরেননি কিংবা মুঠোফোনে দেওয়া বার্তার জবাব দেননি তামিম।

আফগানদের বিপক্ষে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ এবং তামিম মাত্র ১৩ রানে আউট হয়ে যান। শতভাগ ফিট না হয়েও খেলার জন্য হাতুরুসিংহের সঙ্গে তার মতের অমিল হয়। এরপরই ম্যাচ শেষে টিম হোটেল ছাড়েন তিনি। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দলের জন্য ক্ষতিকর হবে কিংবা বোঝাস্বরূপ কিছুই করবেন না। সেই সিদ্ধান্তই হয়তো নিয়ে ফেলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য বিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তামিমের। তাকে জানানো হয়, প্রয়োজনে এই সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে বিশ্রাম নিতে। কারণ আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে তামিমকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কথাতেই নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি তামিম। নিজ শহর চট্টগ্রামেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তামিম বলেন, ‘এখানেই আমার সমাপ্তি। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল।’

কি কারণে ৩৪ বছর বয়সে এসে মর্যাদার ওয়ানডে বিশ্বকাপের মাত্র সাড়ে ৩ মাস আগে অবসরের সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক? বিষয়টি সবাইকে বিমূঢ় করে দিয়েছে। তামিম বলেছেন, ‘এটা কোনো হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। বিভিন্ন কারণে আমি এটা নিয়ে ভেবেছি, কিন্তু সেসব এখানে বলতে চাই না। আমি পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি মনে করি এটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।’ ২০০৭ সালে ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে যাত্রা শুরু হয় তামিমের। এরপর একটানা ১৬ বছর তিনি খেলেছেন বাংলাদেশের জার্সিতে। বাঁহাতি এই ওপেনার এখন পর্যন্ত ৩ ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে সর্বাধিক রান ও সেঞ্চুরির মালিক।

ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে সতীর্থ হয়ে, প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলেছেন তিনি। অবসর ঘোষণার সময় বারবার কণ্ঠ ভারি হয়ে এসেছে তামিমের এবং কথা বন্ধ করে কিছুক্ষণ কেঁদে নিয়েছেন। এরপর আরও বলেছেন, ‘কিছু মানুষকে আমার অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হবে। আমি সবসময়ই বলেছি যে ক্রিকেটটা আমি খেলেছি বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। জানিনা কতটা তাকে আমি গর্বিত করতে পেরেছি এই ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে। অনেক মানুষ আছে যাদের ধন্যবাদ না দিলেই নয়। আমার ছোট চাচা আকবর খানের হাত ধরে আমি আমার প্রথম টুর্নামেন্ট খেলতে গেছি।

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের কোচ তপন দা ছিলেন আমার শৈশবের কোচ। অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭ ও ১৯ ও ‘এ’ দলে যাদের সঙ্গে খেলেছি এবং প্রিমিয়ার লিগ, এনসিএল, জাতীয় দলে যাদের সঙ্গে খেলেছি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ এত দীর্ঘ সময় দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়ার জন্য।’ খুব বেশি কথা বলতে চাননি তামিম। অনেক আগেই পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি অবসর নেওয়ার বিষয়ে। তবে আপাতত টেস্ট ক্রিকেট ছাড়তে চেয়েছিলেন। তবে গত কয়েকদিনের ঘটনাক্রমে দ্রুতই জাতীয় দল থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ২০২১ সালের টি২০ বিশ্বকাপের বছর ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে বিরতি নেন তামিম।

বিশ্বকাপের আগে সেই বিরতির মেয়াদ শেষ হলে তিনি জানিয়ে দেন, ওই বিশ্বকাপ খেলবেন না কারণ প্রস্তুতি নেই। কিন্তু সেই বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের হয়ে টি২০তে ফেরেননি তামিম। এরপর গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের মাত্র ৩ মাস আগে (১৭ জুলাই, ২০২২) ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। এবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেই অবসরে গেলেন তিনি। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্ট ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া তামিম ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হন ২০১৯ সালে। এরপর ৩৭ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ২১ জয়ের পাশাপাশি ১৪ হার দেখেছেন তিনি। সবসময়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে খেলেছেন ক্রিকেট। সে বিষয়ে তামিম বলেছেন, ‘আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই।

তবে একটা বিষয় অবশ্যই বলতে চাই যে, আমি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে খেলেছি, আমি নিজের সেরাটা দিতে চেয়েছি। হয়তো আমি তেমন ভালো করতে পারিনি, কিংবা এতটা ভালো ছিলাম না- জানি না। কিন্তু যখনই আমি মাঠে ছিলাম নিজের শতভাগ উজাড় করে দিয়েছি।’ ওয়ানডে ক্রিকেটে এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক রানের (৮৩১৩) মালিক তামিম শুধু ভারতের রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির চেয়ে পিছিয়ে। টেস্টেও বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান তার। বিশ্বকাপের আগে তাই তামিমের অবসরে স্তম্ভিত বিসিবি।

এ বিষয়ে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তার অবসরের সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। শকিং নিউজ। খুবই প্রি-ম্যাচুউর সিদ্ধান্ত। হেসে খেলে দুই বছর খেলতে পারত। বোর্ড থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তারপর।’

spot_img
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

spot_img
spot_img

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
ক্যাপচা ব্যবহারকারীর স্কোর ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন!
error: Content is protected !!