নবাবগঞ্জ থেকে সিনিয়র প্রতিবেদক :
নিজে খুব বেশি দুর লেখাপড়া করতে পারেননি। তবুও তিনি শিক্ষা প্রেমি! অর্থের অভাবে কেউ লেখাপড়া করতে পারবেনা এটা সে মেনে নিতে পারেন না। এরকমই এক শিক্ষা প্রেমি নাম আতাউর রহমান। তিনি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের ছোট গোবিন্দপুর এলাকায় বসবাস করেন। তার বাসার পাশেই গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি বিগত সাত বছর হলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এই এলাকার গরীব ও অসহার শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এই শিক্ষা প্রেমি আতাউর রহমান।
অতি অল্প দিনেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় চারশ’ এর উপরে। আর দাঁড়াবেই বা না কেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষায় জন্য ব্যাপক উৎসাহিত করা হয় শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টিতে নতুন বছরে ভর্তি হলেই শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস, বই, খাতা-কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ এবং অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের বেতন, পড়ালেখার খরচসহ নানা সমস্যার সমাধান করে থাকেন ঐ শিক্ষা প্রেমি আতাউর রহমান। এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতেই তিনি নিজ উদ্যোগে এসব করে চলছেন বলে জানা যায়।
এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর নতুন ভর্তি হওয়া ২৯জন শিক্ষার্থীসহ শতাধিক শিক্ষার্থীর বিনামূল্যের স্কুলড্রেসের কাপড় বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার পহেলা ফেব্রুয়ারী দুপুরে বিদ্যালয় সভা কক্ষে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আতাউর রহমান আলোচনা সভায় বলেন, টাকার জন্য আমি বেশি দুর লেখাপড়া করতে পারিনি। তবে আমি চাই সবাই লেখাপড়া করে বড় হোক। নিজে বেশি দুর লেখাপড়া না করার অনুতাপে জ্বলি। আল্লাহ আমাকে ব্যবসায়ী বানিয়েছেন। কিছু টাকাও দিয়েছেন। আমার এলাকার কোন ছেলে-মেয়ের টাকার জন্য লেখাপড়া বন্ধ হবে না। আমি যতদিন বেঁচে আছি শিক্ষার প্রসারে আন্দোলন করে যাবো।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, টাকার জন্য আপনার সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ করবে না। কোন লজ্জা নয়, কাউকে না জানিয়ে আমার কাছে চলে আসবেন। আমি ঐ ছাত্র-ছাত্রীর দায়িত্ব নিয়ে তাকে লেখাপড়া করাবো।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শশাঙ্ক ভূষণ পাল চৌধুরী এর সভাপতিত্বে স্কুলড্রেস বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যন্ত্রাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মনিরুজ্জামান তুহিন।
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, কলাকোপা কোকিলপ্যারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম, মহব্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অরুন কুমার সাহা, সমাজকর্মী হাবিবুর রহমান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ হালদার, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য স্বপন কুমার হালদার, তুষার আহম্মেদ প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে বিদ্যালয়ের নতুন ভর্তিকৃত ২৯জনসহ শতাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে স্কুলড্রেস বিতরণ করা হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাপ অনুসারে ছেলেদের জন্য শার্ট ও প্যান্ট পিছ এবং মেয়েদের জন্য সেলোয়ার ও কামিজের কাপড় বিনামূল্যে দেয়া হয়। এ সময় নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেসের কাপড় পেয়ে উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন।