রুপালী বাংলা নিউজ ডেস্ক :
ফরিদপুরের মধুমতি নদীর পানি বাড়ায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। শিকারপুর, টিটা পানাইল, কুমুরতিয়া, ইকড়াইল ও টিটা গ্রামে মধুমতি নদীর তীরবর্তী প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন আতঙ্কে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শত পরিবার। ফলে হুমকিতে পড়েছে এলাকার ১০টি জামে মসজিদ, ইতোমধ্যে ইকড়াইল গ্রামের একটি মসজিদ নদীতে গ্রাস করে নিয়েছে। ইকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে রয়েছে নদী, যেকোনো মুহূর্তে ভাঙনে বিলীন হবে স্কুলটি। ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না।
টগরবন্দ ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, মধুমতি নদীর ভাঙনে এ বছর চারটি বসতঘরসহ ৬৮ শতাংশ জমি হারিয়েছেন। এখন নদীর পাড়ে অন্যর জমিতে ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করছেন তিন। অবশিষ্ট কিছু ফসলি জমি আছে সেটুকু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
একই গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছেন। দুই একর ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে।
এছাড়াও উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের শিকারপুর, টিটা পানাইল, কুমুরতিয়া, ইকড়াইল ও টিটা গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক বাসিন্দা তাদের বসতঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচ গ্রামের ১০টি জামে মসজিদ, একটি কলেজ, দুইটি হাইস্কুল, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদরাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি সাব পোস্ট অফিস, দুইটি বড় হাট ও ১০টি মাছ ও গবাদিপশুর খামার, কয়েকটি কাঁচা সড়ক, ঈদগাহ ও কবরস্থানসহ শত শত একর ফসলি জমি, গাছপালাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এলাকাবাসীর দাবি, স্বল্প সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে পাঁচটি গ্রামের সব কিছু ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনের ব্যবধানে এ অঞ্চলে মধুমতি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় তিন কিলোমিটার জায়গা। এ ভাঙনে অন্তত ৪০ থেকে ৫০টি বাসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতায় অনেকে ভিটেমাটি সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। এ অঞ্চলের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর চলতি বছরের ২৬ মে এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত একটি কাগজে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
গত বুধবার দুপুরে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ কে এম রায়হানুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।
টগরবন্দ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাচান বলেন, মধুমতিতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বেড়েছে। ভাঙন রোধে এখনই যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে এই অবহেলিত এলাকা মধুমতি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামান বলেন, ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর চলতি বছরের ২৬ মে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণ করার জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার দায়িত্বে থাকা ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সন্তোষ কর্মকার জানান, নদীভাঙন কবলিত স্থানে গত বুধবার দুপুরে আলফাডাঙ্গা প্রশাসনের লোকজন নিয়ে পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি আজই ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করা হবে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল জানান, নদীভাঙন এলাকা গত বুধবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু হবে। নদী ভাঙন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।