রুপালী বাংলা নিউজ ডেস্ক :
‘৩০ বছরের রাস্তা। তবুও চলাচল করতে পারিনা। ঘরের পিছনের অংশ ব্যতিত তিন পাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। হাঁটাচলায় খুবই কষ্ট হয়। স্বামী-সন্তান ও নাতনিদের নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। পথের জমি ক্রয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা বিক্রি করেনা। কষ্ট থেকে বাঁচতে বসতঘর ও জমি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা কারীদের কাছে। সেটিও ক্রয় করছে না। আমার স্বামী রিক্সা চালক। ওনারা বড়লোক। বাড়িতে প্রবেশে এক রাস্তা ব্যবহারে ওনাদের নাকি সন্মান নষ্ট হয়ে যাবে। ‘কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রতিবেদককে কথাগুলো বলেছেন রোকেয়া বেগম। তিনি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের গন্তব্যপুর হাফেজীয়া মাদরাসা সংলগ্ন মুক্তার বাড়ির আবুল বাশারের স্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, চলাচলের রাস্তার জমি কিনতে চেয়েছি। বায়নার টাকাও দিয়েছি মালিককে (পূর্বের)। কিন্তু বেশি দাম ও প্রভাব খাটিয়ে মমিন উল্লাহরা জমিগুলো ক্রয় করে নেন। ওই রাস্তা দিয়ে এখন আমাদের হাটাচলা করতে দেয়না।
অভিযুক্ত মমিন উল্লাহ ওই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডস্থ মুক্তার বাড়ির মৃত আলী আহম্মদের ছেলে। আবুল বাশার একই এলাকার মৃত মমিন উল্লাহ ছেলে।
জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর পূর্বে জমি ক্রয় করে বসতঘর নির্মাণ করে আবুল বাশার। সে থেকে অন্যের জমিতে রাস্তা তৈরি করে চলাচল করছেন। কয়েক বছর পূর্বে জমিগুলো ক্রয় করে নেয় প্রতিবেশী মমিন উল্লাহ। তখনও পূর্বের রাস্তা দিয়ে হাটাচলা করতেন আবুল বাশার। তবে কোন কারন ছাড়া গত কয়েক মাস পূর্বে মমিন উল্লাহ রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। বাশারদের বসতঘরের তিন পাশে কাটাতারের বেড়া দেন।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, থানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আদালতে একাধিক শালিসী বৈঠক ও অভিযোগ হয়। প্রত্যেকবারই রাস্তা থকে প্রতিবন্ধকতা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কারো কথা কিংবা আদালতের আদেশ কর্ণপাত করেনি মমিন উল্লাহ।
আবুল বাশার বলেন, বসতঘর নির্মাণের পর থেকে রাস্তাটি ব্যবহার করছি। কোন সমস্যা হয়নি। প্রতিবেশী মমিন উল্লাহরা জমিগুলো ক্রয়ের পর থেকে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। ঘরের তিনপাশে কাটাতারের বেড়া দিয়ে রাখেন। সড়কের ওই জমিগুলো আমিও খরিদ করতে চেয়েছি। কিন্তু মমিন উল্লাহ অতিরিক্ত দাম দিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে জমি ক্রয় করে নেন। আমি মালিকের সঙ্গে বায়নাও করেছিলাম। পরে মালিক ওই টাকা ফেরত দিয়ে দেয়।
আরও বলেন, সমস্যাটি সমাধানে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে জানিয়েছি। ওনারা রাস্তাটির প্রতিবন্ধকতা খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। এছাড়া মমিন উল্লাহর করা থানা ও আদালতের রায়েও রাস্তায় থাকা প্রতিবন্ধকতা খুলে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু মমিন উল্লাহ কারো কথা শুনেনি। এখনো পর্যন্ত আমাদের ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে দিচ্ছে না।
আবুল বাশারের বড় ছেলে হাফেজ ওমর ফারুক বলেন, চাকরির প্রয়োজনে মাদরাসায় থাকি। বাবা-মাকে দেখার ইচ্ছে হলেও আসতে পারিনা। বাড়িতে আসার রাস্তাটি মমিন উল্লাহরা বন্ধ করে রেখেছেন। রাস্তায় চলাচলতো দূরের কথা ওদিকে তাকালেও গালমন্দ করে। তবে মাঝেমাঝে বাড়িতে আসা হয়। ঘরের পিছনে অন্যের জমি দিয়ে। এখন বাড়িতে যেতে হলে, কোমর পানিতে ভিজে যেতে হয়।
আরও বলেন, বাবা-মা আমাদের ঘরের পিছন দিয়ে জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করে। সেটিও মমিন উল্লাহরা ওই জমির মালিককে দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকাত সৃষ্টি করে রাখে। চলাচলের রাস্তা না থাকায় ছোট বোন বর্ষার শুরু থেকেই মাদরাসায় যেতে পারছে না। কখনো গেলেও পানিতে ভিজে যেতে হয়।
অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে মমিন উল্লাহ কোন কথা বলেনি। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান। বাড়িতে উপস্থিত থাকা তাঁর ছেলের স্ত্রীরাও কোন কথা বলেনি। তবে রিক্সাচালক আবুল বাশারদের বিভিন্ন গালমন্দ করেন। রাস্তায় চলাচল করলে মারধর ও ঝাড়ু দিয়ে মারার কথাও বলেন।
স্থানীয় সমাজকর্মী জাকির হোসেন সুমন বলেন, দীর্ঘদিনের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। এটি অপরাধও। শুনেছিলাম রাস্তার প্রতিবন্ধকতা খুলে দিতে মেম্বার, চেয়ারম্যান ও থানা থেকে বলা হয়েছিলো। পুলিশ একবার প্রতিবন্ধকতা সরিয়েও দিয়েছে। তবে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফলে মানবেতর জীবন-যাপন করছে রিক্সাচালক আবুল বাশারের পরিবার। প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, বিষয়টি সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদ আলম রানা বলেন, চলাচলের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরির সুযোগ নেয়। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।