দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ :
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ধলেশ্বরী ব্রিজ থেকে কাটিগ্রাম পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন রাস্তা উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে রাস্তাটির প্যালাসেটিং ও গার্ডার নির্মাণে শিডিউলবহির্ভূতভাবে কাজ করা হচ্ছে, যা এর দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ৮৩১ টাকা ব্যয়ের এই কাজটি পেয়েছে মেসার্স জুই এন্টারপ্রাইজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে এবং নির্মাণ প্রক্রিয়া শিডিউল মানছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্যালাসেটিং ও গার্ডার নির্মাণে রডের খাঁচার রিং ৬ ইঞ্চি পরপর লাগানোর কথা থাকলেও, ১৩ থেকে ১৭ ইঞ্চি পরপর রিং পরানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, রিংগুলো সঠিকভাবে রডের সাথে বাঁধা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে রিংগুলো শুধুমাত্র গুনা দিয়ে আলগাভাবে বাঁধা হয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে একেবারেই বাঁধা হয়নি, যা গার্ডারের কাঠামোকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে তুলছে।
এছাড়াও, গার্ডারের পিলারে ঢালাইয়ের সময় অপর্যাপ্ত সিমেন্ট এবং ময়লা মিশ্রিত সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিকেরা এলোমেলোভাবে রডের খাঁচা বসিয়ে তার ওপর ঢালাই দিচ্ছে, যা নির্মাণ কাজের মান নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজটি তদারক করার জন্য এলজিইডির কোনো কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জুঁই এন্টারপ্রাইজের মালিক নাঈম হোসেন বলেন, বিগত সময়ে রাস্তায় যে সকল ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছিল, সেগুলো একেবারেই খারাপ ছিল। ওইসব ইট এস্টিমেটে ধরা আছে এই কাজে।
তিনি আরও বলেন, প্যালাসেটিংয়ে যে অনিয়ম হয়েছিল, তা আপনারা চলে যাবার পর ঠিক করা হয়েছে।
সদর উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন জানান, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি কাজটি তদারক করতে পারেননি। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে যদি কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই অংশটুকু ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হবে।
সদর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার রইসুল আরিফিনও দ্রুত রাস্তাটি পরিদর্শন করে কোনো অনিয়ম থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
স্থানীয়রা দ্রুত কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা একটি টেকসই এবং মানসম্মত রাস্তা নিশ্চিত করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই অনিয়ম যদি চলতে থাকে, তাহলে বিপুল অঙ্কের সরকারি অর্থ অপচয় হবে এবং সাধারণ মানুষ নিম্নমানের অবকাঠামোর কারণে ভোগান্তির শিকার হবে।