মানিকগঞ্জ থেকে দেওয়ান আবুল বাশার :
মানিকগঞ্জে শহীদ রবিউলকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় শহীদ এসি রবিউল করিম (কামরুল) এর অষ্টম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে মানিকগঞ্জের কাটিগ্রামে সোমবার (১ জুলাই) সকালে শোক র্যালী ও বাসাই এলাকায় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রবিউল প্রতিষ্ঠিত স্কুল নজরুল বিদ্যাসিঁড়ির সামনে থেকে শোক র্যালী শুরু হয়ে কাটিগ্রাম কবরস্থানের পাশে গিয়ে শেষ হয়। র্যালীতে ব্লমসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও রবিউলের ঘনিষ্ঠরা অংশ নেন। পরে তারা রবিউলের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে তারা উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের বাসাই গ্রামে ব্লমস বিশেষায়িত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যান। সেখানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জি.আর শওকত আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপ্লব হোসেন সেলিম, ব্লমসের সদস্য সচিব শহিদ রবিউল করিমের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস, সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন কচি, রবিউলের সহধর্মিণী উম্মে সালমা প্রমুখ।
এতে বিপ্লব হোসেন সেলিম বলেন, রবিউলের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তার কাজগুলো আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়। আমরা একসঙ্গে ব্লমস শুরুর সময় কাজ করেছি। তখন দেখেছি মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধের জায়গাটি কতটা প্রকট। আমার সক্ষমতা খুবই সীমিত। এরপরও ব্লমসকে টিকিয়ে রাখতে আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করে যাবো। এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে কথাও বলেছি। সবাই মিলে ব্লমসের জন্য কাজ করে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলেই রবিউলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
শহীদ রবিউলের ভাই শামসুজ্জামান শামস বলেন, আমাদের দেশে রবিউলদের সংখ্যা খুবই কম। দেশের জন্য, মানুষের জন্য তারা কাজ করেছেন অনেকটা নিরবেই। রবিউল ভাই গ্রামের অবহেলিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ব্লমস কাটিগ্রাম প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। পাশাপাশি স্বাভাবিক ছেলে মেয়েদের জন্য নজরুল বিদ্যা সিঁড়ি নামের অপর একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি খুব অল্প সময়ে তাঁর সামর্থ্য অনুসারে এসব করেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব এখন আমাদের সকলের। সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
জিআর শওকত আলী বলেন, ব্লমস পরিচালনার ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্কটসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাতা রবিউল থাকলে হয়তো আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হতো না। রবিউলের স্বপ্নে গড়া প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রবিউল আমাদের সবাইকে দেখিয়েছে কীভাবে ভালোবাসতে হয়, মানুষের সেবা করতে হয়।
এ সময় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় সমাজের সর্বস্তরের সহযোগিতা চান বক্তারা। পরে ব্লমস এর উপস্থিত সব শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এদিকে বিকেল ৩টার দিকে মানিকগঞ্জের পুলিশ লাইনসের শহিদ রবিউল করিম ফটকের পাশে নির্মিত শহিদ এসি রবিউল করিমের ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জ্যেষ্ঠ সহকারি কমিশনার (এসি) রবিউল। এ সময় জঙ্গিদের ছোড়া গুলি ও গ্রেনেডের আঘাতে তিনি নিহত হন। একই ঘটনায় বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিনও নিহত হন।
রবিউল করিমের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের কাটিগ্রাম গ্রামে।