26 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

কেরাণীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী টুন্ডা আমিন গ্রেপ্তার

spot_img

আরো সংবাদ

spot_img
spot_img

সিনিয়র প্রতিবেদক
ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতিকুল্লাহ চৌধুরীকে নৃশংস ভাবে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ও দীর্ঘদিন পলাতক আসামী রফিকুল ইসলাম আমিন ওরুফে টুন্ডা আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগর র‌্যাব-১১ এর লেঃ কর্ণেল অধিনায়ক তানভীর মাহমু পাশা, পিপিএম, পিএসসি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানান।

র‌্যাব-১১ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কোন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী। তিনি ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে কেরাণীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের কাজের জন্য দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকার উদ্দেশ্যে তার নিজ বাসা থেকে বের হন। ঐদিন রাতে আতিক উল্লাহ চৌধুরী বাসায় ফিরে না আসলে তার পরিবারের লোকজন তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পায়। পরের দিন ১১ ডিসেম্বর আতিক উল্লাহ চৌধুরী এর ছেলে দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী হত্যার সংবাদটি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হবার পর ঘটনাটি কেরাণীগঞ্জসহ দেশব্যপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

র‌্যাব-১১ আরও জানান, থানায় অবস্থানকালে আতিক উল্লাহ চৌধুরী এর ছেলে সংবাদ পায় কোন্ডা ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের দেয়াল পাশে একটি লাশ পড়ে আছে। এমন সংবাদ পেয়ে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে সেখানে গিয়ে আগুনে পোড়া বিকৃত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশের সহায়তায় লাশ উলট পালট করে লাশের সাথে থাকা একটি এটিএম কার্ড ও ইউনিয়ন পরিষদের কাগজ পত্র দেখে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে তার বাবার লাশ বলে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে ঢাকা জেলার দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং ২১, তারিখ- ১২/১২/২০১৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।

এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্ত শেষে পুলিশ গুলজার ও তানুসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করে। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমানে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় গত ০২/১২/২০২০ খ্রিঃ তারিখ আসামী তাজুল ইসলাম তানু, গুলজার, মোঃ জাহাঙ্গীর ওরফে জাহাঙ্গীর খাঁ, আহসানুল কবির ইমন, রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন, শিহাব আহমেদ শিবু, মোঃ আসিফ’দেরকে উক্ত আতিক উল্লাহ চৌধুরী হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন।

এছাড়াও আসামী তাজুল ইসলাম তানু, রফিকুল ইসলাম আমিন @ টুন্ডা আমিন, শিহাব আহমেদ শিবু, মোঃ আসিফ পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ইস্যু করেন। ইতিপূর্বে অন্যান্য আসামীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হতে গ্রেপ্তার হলেও এই মামলার অন্যতম আসামী আমিন ওরুফে টুন্ডা আমিন দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে ছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১১ এর একটি চৌকস অভিযানিক দল ছায়া তদন্ত শুরূ করে। গত ১৮ মে ২০২৪ তারিখ র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-৮ এর যৌথ আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্য এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ইটেরপুল, মাদারীপুর সদর এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে রফিকুল ইসলাম আমিন@ টুন্ডা আমিনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

র‌্যাব-১১ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামী ঘটনার সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। সে আরও জানায় ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কোন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিক উল্লাহ চৌধুরী সাথে নির্বাচনের প্রার্থিতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ নিয়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অপর আসামী গুলজারের সাথে বিরোধ চলছিল। সেই শত্রæতার জেরধরে গুলজার বেশ কয়েকবার আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করেছিল। ভিকটিম আতিক উল্লাহ চৌধুরী তার কথায় কোন কর্ণপাত না করলে গুলজার ও টুন্ডা আমিন মিলে আতিক উল্লাহ চৌধুরীর হত্যার পরিকল্পনা করে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামী রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন এবং অপর আসামী গুলজার পরিকল্পনা অনুযায়ী আতিক উল্লাহ চৌধুরীর গতিবিধি লক্ষ রাখার জন্য সম্পা নামক এক নারীকে নিয়োগ করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ সাল রাতে আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে সম্পা তার সাথে দেখা করা জন্য কোন্ডা হাসপাতালের গেটে আসার জন্য বলে। আতিক উল্লাহ চৌধুরী সম্পার কথা মত রিক্সাযোগে হাসপাতালের গেটে আসা মাত্র পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা গুলজার ও রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে রিক্সা থেকে নামিয়ে রিক্সা বিদায় করে দেয়।

পরে গুলজার ও রফিকুল ইসলাম আমিন ওরফে টুন্ডা আমিন তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলে আতিক উল্লাহ চৌধুরী’কে হাসপাতালে দক্ষিন সীমানা বরাবর রাস্তায় নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে খুনিরা আতিক উল্লাহ চৌধুরীর মুখ চেঁপে ধরে কোলে করে হাসপাতালের পশ্চিম পাশের সীমানা ঘেঁষে নিচু জমিতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ভিকটিমকে তার পরিহিত পাঞ্জাবী ছিড়ে মুখ বাধিয়া অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় গলা টিপে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে মৃতদেহের পরিচয় গোপন করা জন্য আসামীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের পেট্রোল মৃত আতিক উল্লাহ চৌধুরী এর দেহে ছিটিয়ে দিয়ে মৃতদেহটিকে পুড়িয়ে ফেলে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়।

এছাড়াও গ্রেপ্তারকত আসামীর বিরুদ্ধে পূর্বে ০২টি মাদক এবং মারামারির মামলা রয়েছে বলেও জানায় র‌্যাব-১১।

spot_img
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

spot_img
spot_img

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
ক্যাপচা ব্যবহারকারীর স্কোর ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন!
error: Content is protected !!