সিনিয়র প্রতিবেদক :
ঢাকার নবাবগঞ্জে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর নামীদামি ব্রান্ডের ভেজাল ঔষধ বিক্রয় চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ। বুধবার (২৭ মার্চ) নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে অভিযানে চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান ভেজাল ঔষধ জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলার হরিষকুল গ্রামের জীবন সরকারের ছেলে উৎপল সরকার (৪৭), উপজেলার শোল্লা গ্রামের মৃত মতিলাল মজুমদারের ছেলে প্রকাশ চন্দ্র মজুমদার (৪৭) ও মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার দক্ষিণ জামসার মৃত আবুল হাশেম খানের ছেলে মো. নুরুজ্জামান খান (৩৫)।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলন সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুরে নবাবগঞ্জ সদর মুক্তি ক্লিনিকের নিচতলার সৈকত ফার্মেসীতে ভেজাল সারজেল ঔষধ বিক্রি করতে যায় উৎপল সরকার। এসময় দোকানদার উৎপলের কাছে ক্যাশ মেমো চাইলে সে দিতে অস্বীকার করে এবং দোকানদারকে শর্ত দেন ঔষধ ডিসপ্লে হিসেবে সাজানো যাবে না, নিচে রেখে বিক্রয় করতে হবে। উৎপলের এমন আচরন সন্দেহ হলে সৈকত ফার্মেসীর মালিক নবাবগঞ্জ থানাকে ঘটনাটি অবহিত করেন। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উৎপলকে ভেজাল ঔষধ সহ গ্রেপ্তার করেন এবং তার কাছ থেকে থেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের ১০ বক্স সারজেল ভেজাল ঔষধ জব্দ করেন।
এ ঘটনায় হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর উপ-ব্যবস্থাপক, লিগ্যাল এ্যাফেয়াস মো. মোজারুল হক তালুকদার বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামানের নির্দেশে দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলমের তত্বাবধানে নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ জালালের নেতৃত্বে তদন্তে নামে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত উৎপল সরকার বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদে উৎপল সরকার জানান, নবাবগঞ্জের হরিস্কুলে তার একটি ঔষধের দোকার রয়েছে। তিনি আরেক আসামী প্রকাশ চন্দ্র মজুমদারের কাছ থেকে ভেজাল ঔষধ কিনে নিজের ফার্মেসিতে ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন ফার্মেসীতে ঐসব ভেজাল ঔষধ বিক্রি করতেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে প্রকাশকে এবং প্রকাশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জের সিংগাইরের জামসা বাজারে অভিযান চালিয়ে নুরুজ্জামান খানকে গ্রেপ্তার করে এবং তার গোপন ঘর থেকে প্রায় ১ লাখ টাকার বিভিন্ন নামীদামি ব্রান্ডের ভেজাল ঔষধ জব্দ করেন। একই সাথে বিভিন্ন ভূয়া ও নিবন্ধনবিহীন কোম্পানীর ঔষধ উদ্ধার ও জব্দ করা হয়। এছাড়া প্রকাশ মজুমদারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভেজাল ঔষধ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনা জিজ্ঞাসাবাদে প্রকাশ জানিয়েছেন তিনি কুমুদিনী ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নবাবগঞ্জ থানার বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করতেন। প্রায় ৫/৬ মাস আগে চাকরিচ্যূত হন। এরপর আরেক আসামী নুরুজ্জামান খানের সহযোগিতায় ঢাকার ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতাল সংলগ্ন ঔষধের মার্কেট হইতে কমদামে ভেজাল ঔষধ কিনিয়া খান ব্রাদার্স ফার্মেসিতে রেখে ও নিজ হেফাজতে রেখে কৌশলে নবাবগঞ্জের বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি করতেন।
পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত ৩জনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে হেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৮১০০টি সারজেল ক্যাপসুল, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৯০০ কোরালক্যাল ডি ট্যাবলেট, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ৪৩২টি জিম্যাক্স ট্যাবলেট, অপসোনিন ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের ৩৬৪০টি ফিনিক্স ট্যাবলেট, গ্রীন লাইফ ন্যাচারাল হেলথ কেয়ার (আয়ুবেদিক) লিমিটেডের ১৩ কৌটা গ্যানোপ্লেক্স পাউডার, বোটানিক ল্যাবরোটারিজ (ইউনানি) লিমিটেডের ৮ কৌটা আনার দানা ট্যাবলেট, বায়ো সাইন্স আয়ুবেদিক লিমিটেডের ৯ কৌটা আনার ট্যাবলেট, বোটানিক ল্যাবরোটারিজ (ইউনানি) লিমিটেডের ৭ কৌটা বি-ট্যাব ট্যাবলেট, ৯ কৌটা হেলফিট ট্যাবলেট, শেড আয়ুবেদিক লিমিটেডের ৬ কৌটা রুচি ট্যাব, রাজশাহীর মুসলিম মেডিহেলথ (ইউনানি) লিমিটেডের ২০০ কৃশতা ফওলাদ ট্যাবলেট, ২০০টি মুকাব্বী ট্যাবলেট, পেনাসিয়া ল্যাবরোটারিজ ইন্ডাঃ (ইউনানি) লিমিটেডের ২০০টি হাব্বে নিশাত ট্যাবলেট, লিমিড ল্যাবরোটারিজ লিমিটেডের ৪ কৌটা গুড হেলথ ট্যাবলেট, নামবিহীন কোম্পানীর ২৯ পিস স্যাকোজিমা মলম ও প্যারেন্টস ল্যাবরোটারিজ লিমিটেডের ১৯ বোতল জিনসিন পি সিরাপ। সবমিলিয়ে তাদের কাছ থেকে ৮১০০টি ক্যাপসুল, ৫৫৭২টি ট্যাবলেট, ৫৬টি কৌটা, ২৯ পিস মলম ও ১৯ বোতল সিরাপ ভেজাল ঔষদ জব্দ করে পুলিশ।