সিনিয়র প্রতিবেদক :
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকায় চাইনিজ কুড়াল দ্বারা কুপিয়ে ভগ্নিপতি রাসেল খানকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার একমাত্র পলাতক আসামি শেখ রহমানকে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানী ঢাকার উত্তরা পশ্চিম এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে র্যাব-১০ এ তথ্য জানান । গ্রেপ্তারকৃত আসামি শেখ রহমান মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার রুদ্রপাড়া এলাকার মৃত শেখ তফি এর ছেলে।
প্রেস রিলিজ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামি শেখ রহমান নিহত রাসেল এর স্ত্রীর বড় ভাই। রহমান বেশ কিছুদিন যাবৎ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে সে মাদক সেবনের অর্থ যোগাড় করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মারামারিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। অতঃপর নিহত রাসেল বিষয়টি রহমানের পরিবারের সাথে আলোচনা করে শেখ রহমানকে চিকিৎসার জন্য একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রেরণ করেন। যার কারণে রহমান নিহত রাসেল এর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। পরবর্তীতে রহমান গত ৩ সেপ্টেম্বর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র হতে চিকিৎসা শেষে বাড়ীতে ফিরে আসে এবং সে ৪০ দিনের জন্য চিল্লায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করে। চিল্লায় যাওয়ার কথা শুনে তার পরিবারের লোকজন অনেক আনন্দিত হয়। বিষয়টি শুনে ভিকটিম রাসেল চিল্লায় যাওয়ার জন্য রহমানকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে। অতঃপর গত ১১ সেপ্টেম্বর রহমান চিল্লায় যাওয়ার কথা বলে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাসা থেকে বের হয়।
র্যাব-১০ জানায়, ১৩ সেপ্টেম্বর নিহত রাসেল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন রুদ্রপাড়া এলাকায় তার খালু শশুর এর টিনের বসত ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। পরের দিন ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে রহমান তাকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করার জেরধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে কৌশলে ঘরের জানালা ভেঙ্গে উক্ত ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে এবং তার কাছে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে ঘুমন্ত অবস্তায় নিহত রাসেলের মাথায় সজোরে কোপ দেয়। যার ফলে কুড়ালটি রাসেল এর মাথায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং রাসেল গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়। অতঃপর রহমান ভিকটিম রাসেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। পরে রাসেলের পরিবারের লোকজন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষনা করেন। পরে মৃত রাসেল এর পরিবারের লোকজন দোহার থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ রাসেল এর মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
র্যাব-১০ আরও জানায়, মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের পর মৃত রাসেল এর বাবা রশিদ খান (৮১) মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায় শেখ রহমান এর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার মামলা নং-১৪/৩৪৯, তারিখ-১৪/০৯/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২ দন্ড বিধি মোতাবেক একটি মামলা দায়ের করা হলে এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও র্যাব-১ এর সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকার উত্তরা পশ্চিম এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামি উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানায় র্যাব-১০।