সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :
আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার পরিবার। নদের পানি বৃদ্ধির সাথে তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কেও এখন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে চরাঞ্চলের বাসিন্দা। সপ্তাহ জুড়ে আড়িয়াল খাঁ নদ ও পদ্মা নদীর ভাঙনে ঢেউখালী ও আকোটেরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বিঘা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে হঠাৎ করে আড়িয়াল খাঁ নদে অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়ে বাড়িতে প্রবেশ করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদপাড়ের বাসিন্দারা। পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে বিষধর সাপের উৎপাত। ফসলীজমি ও নিম্মাঞ্চলে থাকা গ্রামগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় এখন আশ্রয় নিতে বসতি ঘরে উঠছে বিষধর সাপ। বাড়ির উঠানে পানি আসায় শিশুদের পানিতে পড়া নিয়েও দুশ্চিতায় পরিবারের লোকজন।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়, আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী বেষ্টিত। এর মধ্যে চরনাছিরপুর, দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়া, চরমানাইর তিন ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামে পানি ঢুকে প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে এখন চরবাসী। ব্যাপকহারে পানির নিচে রয়েছে আউশ ধান। পদ্মার চরের নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি ও চলাচলের রাস্তা প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে। দেখা দিযেছে নৌযানের সংকট। বসবাসের ঘরবাড়ি এখনো প্লাবিত না হলেও বন্যার আশঙ্কায় দিনরাত নির্ঘুমে পার করছেন ইউনিয়নের বাসিন্দারা। অপরদিকে ঢেউখালী ও আকোটেরচর ইউনিয়নের নদীপাড়ের কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে দিয়ারা নারিকেল বাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসির সরদার জানান, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৩৮টি গ্রাম রয়েছে। নিম্মাঞ্চল গ্রাম এখন পানিতে প্লাবিত। দু’একদিনের মধ্যে সব প্লাবিত হবে। চরের বসতঘর গুলো উচু করার কারনে ঘরে পানি প্রবেশ করতে না পারলেও উঠানে পানি রয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে এখন চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
পানি বৃদ্ধি ও চরবাসী দুর্ভোগ প্রসঙ্গে সদরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সদরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রহমান বলেন, পদ্মা ও আড়িয়াল নদীর পানি বৃদ্ধির তথ্য এখনো পাইনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি প্রবেশ করলে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া সুলতানা জানান, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। নদীপাড়ের মানুষের জন্য নিরাপত্তার কথা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের জানানো হয়েছে। জরুরী পরিষেবা গ্রহন করা হবে।